অনলাইন ডেস্ক
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় নেতাকর্মী ও জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশনা দিয়েছেন।
বুধবার (৩ জুন) এক ভিডিও বার্তায় ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘জনগণের আরও স্বাস্থ্য সচেতনা বৃদ্ধিতে দলীয় নেতাকর্মী ও জনপ্রতিনিধিদের কতিপয় নির্দেশনা দিয়ে দলয়ী সভানেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা। আমি এই নির্দেশনাগুলো প্রতিপালন ও মেনে চলার জন্য আমাদের সকল নেতাকর্মী- জনপ্রতিনিধিদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
নির্দেশনাগুলো হলো: অফিস-আদালত, দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্রই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য ওপর গুরু আরোপ করছি। গণপরিবহনে চলাচলের সময় স্বাস্থ্যবিধি ও শারীরিক দূরত্ব মেনে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। জনসম্মুখে সবসময় মাস্ক পরিধান ও স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা মেনে চলতে অনুরোধ করছি।দলীয় নেতাকর্মীরা নিজেরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন এবং তা প্রতিপালনে জনগণকে সচেতন করবেন।
কাদের বলেন, ‘স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধেগুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। জনপ্রতিনিধিরা অঞ্চলভিত্তিক তদারকির মাধ্যমে সংক্রমণ রোধের পাশাপাশি স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করনে ভূমিকা রাখবেন। আপদকালীন সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অসহায়, দুস্থ মানুষের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবেন।’
তবে হুঁশিয়ারি দিয়ে কাদের আরও বলেন, ‘ইতিমধ্যেই অনিয়মের অভিযোগে অনেক জনপ্রতিনিধি বিরুদ্ধে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। যারা অপকর্ম করবে শাস্তি তাকে পেতেই হবে। তারা দলীয় পরিচয় হলেও কোন অবস্থায় কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। এসকল নির্দেশনা প্রতিপালন এবং করোনা বিরোধী লড়াইয়ে ঐক্যবদ্ধ ভাবে দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সকলকে সচেষ্ট হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’
আমাদের ঐক্যবদ্ধ সাহসী ও মানবিক প্রয়াস সংকট উত্তরণের পথ সুগম করবে বলেও জানান তিনি।
ভিডিও বার্তা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংকট সমাধানে বিরোধী দলসমূহ নানা উদ্যোগ নিয়েছে। করোনা তহবিল গঠন, ত্রাণ কার্যক্রম। করোনা ক্যাম্প চালুসহ সরকারকে সহায়তা, ইত্যাদি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সকল রাজনৈতিক দলকে সরকারকে সহায়তা এবং দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছি। কিন্তু একটি দল সার্কাসের হাতির মত সমালোচনার বৃত্তেই আবর্তিত হচ্ছে। সেই দলটি বিএনপি। সঙ্কটকে শেখ হাসিনা সরকার সম্ভাবনায় রূপ দিতে কাজ করছে, নিরলস। আর বিএনপির সংকটকে পুঁজি করে, রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চায়। এটা তাদের কার্যক্রমে ইতিমধ্যে পরিস্কার হয়ে উঠেছে।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন, করোনা সংক্রমণ রোধে শেখ হাসিনা সরকার নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। জনসমাগম এড়াতে সচেতনতা তৈরি। সাধারণ ছুটি চলাকালে অসহায়, কর্মহীন মানুষের সহায়তা। প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা। চিকিৎসার সক্ষমতা বাড়ানো। টেস্টিং ক্যাপাসিটি বৃদ্ধিসহ, চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহ দিনদিন বাড়ছে।’
সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘শেখ হাসিনা সরকারের সাহসী মানবিক এবং উদ্যমী প্রয়াস দেশ-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে। সরকার সাধারণ ছুটি তুলে নেয়ার সময় এবং আগে-পরে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও কিছু কিছু মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানতে শৈথিল্য প্রদর্শন করছ। যা সংক্রমণের মাত্রাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। এতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, মৃত্যুর হারও ক্রমেই বাড়ছে। এ অবহেলা নিজের জন্যই শুধু নয় পরিবার সমাজ তথা অন্যদের জন্য ভয়ানক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।’
‘সচেতনতার প্রাচীর গড়ে তোলার জন্য আমি আবারও সকলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। না হয় জনস্বার্থে এবং জনস্বাস্থ্যের রক্ষায় সরকার আবারও কড়াকরি আরোপ তথা কঠোর হতে বাধ্য হবে। আপনারা জানেন, সংক্রমনের বৃদ্ধির পাশাপাশি সরকার এই সংক্রমণ রোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে এবং নিচ্ছে। শেখ হাসিনা সরকার জনগণের পাশে সব সময়ই আছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘ক্রম অবনতিশীল এ পরিস্থিতিতে সরকার সংক্রমিত এলাকা এবং নানান দিক বিবেচনা নিয়ে এলাকাভিত্তিক জোনে বিভক্ত করার বিষয়টি ভাবছে। বিশেষজ্ঞগণ এ বিষয়ে কাজ করছে, কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে।’
‘জনগণের ঘনত্ব, সংক্রমণের মাত্রা, রোগীর সংখ্যা, পার্শ্ববর্তী এলাকা, যোগাযোগ ব্যবস্থা, টেস্টিং ফ্যাসিলিটি, চিকিৎসা সুবিধাসহ নানা বিষয় এর সঙ্গে জড়িত। বিস্তারিত পরিকল্পনা পাওয়া গেলে যাচাই-বাছাই করে সরকার এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবে।’
গণপরিবহনের অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও স্বাস্থ্য বিধি নিয়ে সড়কমন্ত্রী বলেন, ‘অধিকাংশ গণপরিবহন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে। আবার বেশ কিছু অভিযোগ আমরা পাচ্ছি। আমি প্রশাসনিক নজরদারি বাড়ানোর অনুরোধ করছি, ঐ সকল এলাকায়। অর্ধেক বা তার চেয়ে কম যাত্রী নিয়েও পরিবহন চলছে। আমি যাত্রীদের নিজেদেরকেও সচেতন থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। না হয়, টার্মিনাল এবং বাস যাত্রা হতে পারে সংক্রমণ বিস্তারের আরেকটি কেন্দ্র।’
তিনি বলেন, ‘গণপরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ কথা আমি আবারও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। মালিক-শ্রমিকদের অনুরোধ ইতিমধ্যে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। এরপরও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় নিশ্চই শাস্তি যোগ্য অপরাধ। এ ব্যাপারে আমি মালিক, শ্রমিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় কারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমি বিআরটিএ’কে নির্দেশনা দিচ্ছি।